পরিচালকের বার্তা

  • সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: ০৪ মার্চ, ২০২২

সাহাবায়ে কেরাম রাযিয়াল্লাহু আনহুম প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে যে তরীকায় ইলম শিখেছেন, ইলম অর্জনের সুন্নাত তরীকা এবং সর্বযুগে উন্নত পদ্ধতি হলো সেটাই। সাহাবায়ে কেরাম [রাযি.] ইলমের সাথে আমলে দাওয়াতকে পুরা করতেন। কিন্তু আজকাল ইলমের সাথে দাওয়াত ও আমলের সমন্বিত প্রয়াস নেই বললেই চলে! হালের রেওয়াজি তরিকা ‘ইলমকে জমা করে, পরে আমল করা’র বিপরীতে আমরা চাই এমন একটি নকশা কায়েম হোক, যাতে করে ইলম অনুযায়ী সকল ছাত্র আমাল ও সুন্নতের পরিপূর্ণ পাবন্দী হয়ে উঠে। তারা আমলকে ইলমের উপর প্রাধান্য দিবে। দাওয়াত ও আমল পুরা করতে করতে একজন ছাত্র ইলম শিখবে। ইলমের সাথে আল্লাহর ভয়, মা’রিফত ও তাকওয়া হাসিল হবে। পাশাপাশি ইলমকে দুনিয়ার আয়-রোজগারে ব্যয় না করে, জামিয়া কাশিফুল উলূম ঢাকার প্রতিটি ছাত্র কারিগরি শিখবে বাধ্যতামূলকভাবে। যাতে করে শিক্ষা সমাপ্তির পর সাহাবাদের মতো দাওয়াত-তা‘লীম-তিজারা (দাওয়াত-শিক্ষা-ব্যবসা) নিয়ে এক সাথে চলতে পারে। আরবী, উর্দু ও ইংরেজী ভাষায় ছাত্রদের দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে, যাতে সারা দুনিয়ায় দ্বীনের তাকাজা নিয়ে চলতে পারে। কুরআন-হাদীসের দক্ষতার পাশাপাশি সমকালিন জ্ঞান-বিজ্ঞানে তাদের দক্ষ করে তোলা হবে, যাতে করে যুগের সকল চ্যালেঞ্জ মুকাবিলায় প্রস্তুত হতে পারে। ইলমেদ্বীন চর্চাকে রুসুম-রেওয়াজ থেকে বের করে সেই ১৫শ’ বছর পূর্বে সাহাবাদের যমানায় নিয়ে যেতে চাই আমরা।

সেই যমানায় ঈমান ও ইলম শেখার কেন্দ্র ছিল মসজিদ। আল্লাহ যদি কবুল করেন, মসজিদভিত্তিক ইলম শিক্ষার যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হবে ‘জামিয়া কাশিফুল উলূম ঢাকা’য়। কেবল কিছু ইলম শিখিয়ে না দিয়ে এটি কীভাবে আমলিভাবে উম্মতের ময়দানে প্রয়োগ করা যায় এবং বাস্তব জিন্দেগীতে নিয়ে আসা যায়, এটি হবে জামিয়া কাশিফুল উলূম ঢাকার মিশন ও ভিশন। সাহাবাদের ইলম হাসিলের এটিই ছিল নমুনা। মাদরাসায় শিক্ষার্থীরা ২৪ঘণ্টা, ৭ দিন, মাসে ৩০ দিন ও সারাবছর শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে থাকে। আমরা মনে করি, সুবিন্যস্ত পরিকল্পনা, সমন্বিত ও সুপরিকল্পিত শিক্ষা এবং শ্রেণি বিন্যাসের মাধ্যমে তাদের সময়ের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে আমলের সাথে ইলম ও কর্মমুখর শিক্ষার বিষয়টি আনন্দঘন পরিবেশেই সম্ভবপর হয়ে উঠবে ইনশাআল্লাহ।

এ বিষয়ে চিন্তাশীল ও দ্বীনী শিক্ষানুরাগী ভাই-বোনদের পরামর্শ ও সহযোগিতা আমরা আশা করি। আল্লাহর উপর ভরসা করে আমরা এর পথচলা শুরু করেছি। আমরা এমন একটি শিক্ষা বিপ্লব ও ইনকিলাবের সাথে জড়িত হব, যা আমার সৌভাগ্য ও পরকালীন নাজাত ও সদকায়ে জারিয়ার বড় একটি মাধ্যম হবে। আল্লাহ আমাদের চিন্তা ও ইচ্ছার মাঝে সমন্বন সাধনের তাওফিক দান করেন। আমিন।

আল্লাহ তা‘আলা তার নিজ দয়া ও মেহেরবানীতে এই পরিকল্পনা ও দ্বীনী প্রতিষ্ঠানকে কবুল করুন। আমরা বিশ্বাস করি, আসমানে কবুল হলে এটি বাস্তবায়ন হওয়া একেবারেই সহজ। বাস্তব উপকরণ আমাদের নেই, তবে আল্লাহর উপর ভরসা ও তাওয়াক্কুলের মাধ্যমে আমরা পথচলা শুরু করেছি। এই বিষয়ে যারা আগ্রহ রাখেন, এমন স্বপ্ন লালন করেন বা আপনার কলিজার টুকরো সন্তানের জন্য কিংবা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এমন একটি পরিবেশ দিয়ে যেতে চান, এমন দরদী ও চিন্তাশীল দ্বীনী ভাইদের পরামর্শ ও সহযোগিতা আমাদের চলার পথকে আরো বেগবান করবে ইনশাআল্লাহ। হে আল্লাহ! এই প্রচেষ্টা ও পরিকল্পনাকে কবুল করুন এবং আপনার দ্বীনের জন্য এখলাসের সাথে আমাদের ইস্তেমাল করে দুনিয়া ও আখেরাতে সম্মানিত করুন। আমিন।

সৈয়দ আনোয়ার আবদুল্লাহ

মহাপরিচালক, জাতীয় কওমী শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড বাংলাদেশ

শিক্ষা, গবেষণা ও সিলেবাস পরিচালক, জাতীয় কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বাংলাদেশ

সম্পাদক, মাসিক দ্বীনি দাওয়াত (আত-তাহকীক)। মোবাইল : ০১৩০৪ ১০১৫৮৮, ০১৮৯৪ ০৯৯৯৯৭